অবান্তর

চিত্রক

কথায় আছে – নেই কাজ তো খই ভাজ। আমারও সেই দশা। অফিস থেকে ফিরে স্ত্রীর হাতের এক কাপ চা, সাথে অনুপান হিসাবে চিঁড়ে বাদাম ভাজা খেয়ে মনটা বেশ ফুরফুরে আছে। বেশ আয়েশ করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে মহাভারত পড়ছিলাম। একটু ভুল বললাম। বলা উচিত ছিল মহাভারত এর গল্প পড়ছিলাম। ম্যাগি লিচি গ্রাসির লেখা দ্য গ্রেট গোল্ডেন স্যাক্রিফাইস অফ দ্য মহাভারত। এই বইটার কথা আমাকে বলেছিলেন গৌতমদা। গৌতমদার সাথে পরিচয় জামশেদপুরে, মাস কয়েক আগে। কাজের সূত্রে জামশেদপুরে গেছিলাম দিন দুয়েক এর জন্যে। সেই কারনেই গৌতমদার বাড়ি যাওয়া কিছু কাজের ব্যাপারে আলোচনা করতে।

গৌতমদা বোধকরি জামশেদপুর আর টাটা ষ্টীল সম্পর্কে জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। যাই হোক, সকালের কাজের কথার পর রাত্রে আবার গেছিলাম ডিনারের নেমন্তন্নে!! একে বাঙ্গালী, তায় আমি বেজায় পেটুক। সুতরাং সোনায় সোহাগা যাকে বলে। কিনতু খাবার কথাটা কয়েক বছর পর যদিও বা ভুলে যাই, গৌতমদা আর সুশ্বেতাদির সাথে কাটানো ওই কয়েক ঘণ্টা জীবনে সব সময়ই কয়েকটা ঝলমলে উজ্জ্বল সময় হিসাবে মনে থাকবে। তার কারন দুজনের অনাড়ম্বর সাবলীল আন্তরিকতা আর নির্ভেজাল সাদামাটা আড্ডায় অনেক কিছু শেখা। নানান গল্পের মধ্যে মহাভারতও ছিল। তখনই এই বইটার সম্পর্কে জানতে পারি। সেই থেকে ভেবে যাচ্ছি বইটা কিনব। সাধারন বাঙ্গালীর মধ্যবিত্তের নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর গল্পের মধ্যে মনের ইচ্ছা আর ইচ্ছার সাকারতার মধ্যে দূরত্বটা বড় বেশি। কিনতু কিছুদিন আগে বইটা আমার হাতে এসেছে। আমি সব সময় নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। সেই মুষ্টিমেয় কজনের মধ্যে পড়ি যাদের ইচ্ছা কোন না কোন সময়ে পূর্ণ হয়। আর আমার চারপাশের এবং অনেক দূরে থাকা পরিচিতজনেরা প্রত্যেকে এত ভাল, আন্তরিক ও গুনী, যে বোধকরি খুব কম মানুষের এমন সৌভাগ্য হয়।
দেখুন আর পাঁচটা অকেজো মানুষের মতই আমিও বলতে যাচ্ছিলাম এক কথা, আর বলে যাচ্ছি হাবিজাবি কথাবার্তা। ফিরে আসি যেখানে শুরু করেছিলাম মহাভারত। আজকের পৃথিবীতে মার্কেটিং আর প্রমোশন খুবই জরুরি| যাই কারো না কেন, যদি বিক্রি হলো তা তার কদর আছে| বিক্রি না হলে যত অনন্য দামী জিনিসই হোক না কেন কেউ ফিরেও তাকাবে না| এই মার্কেটিং আর প্রমোশন শুধু কোনো প্রোডাক্টেই সীমাবদ্ধ না, মানুষের জন্যেও তা একই ভাবে প্রযোজ্য| আমাদের রাজনীতিবিদদের দেখুন| কি অসাধারণ ভাবে নিজেদের মার্কেটিং করে| কেউ ৩ মাসেই ৫ বছরের কাজ শেষ করে দিলেন, কেউ বা সারা পৃথিবী ঘুরে ফেললেন শুধু বোঝাতে যে তিনি কত ডাইনামিক, কেউ বা বিশাল পার্ক বানিয়ে ফেললেন তিনি কত সৌন্দর্যপ্রিয় তা বোঝাতে, কেউ চিৎকার করে বলে দিলেন রাজ্য পেলেই সব বিদেশীদের বার করে দেবেন দেশ থেকে| আমার মতো বোকাসোকা মানুষেরা সেই সব দেখে তাদের পুজো করা শুরু করে দিই|

 

গ্রাসির বইটা পড়তে পড়তে মনে হল যে ভগবানকেও কি এই ক্ষমতালোভী মানুষগুলোর মতো নিজের মার্কেটিং করতে হয় নাকি?? ব্যাসদেব যেন সেই অদেখা অজানা অপরিচিত বিধাতা নামক শক্তিকে সেই ভাবেই প্রতিমূর্ত করেছেন নিজের অজান্তেই। অর্জুনের জন্ম মুহূর্তে দৈববাণী হল যে সেই ছেলে অসাধারন বীর হবেন এবং ইনি শ্রীকৃষ্ণের অংশ। অর্জুন “নর” এবং শ্রীকৃষ্ণ “নারায়ণ”। ওখানেই মনে হয় মহাভারত এক নতুন মোড় নিল ওই ছোট্ট ঘটনাতেই। গীতার বীজ যেন ওখানেই বোনা হল। কাশ্যপ মুনিও তার পরেই এসে কুন্তীকে জানালেন যে তার দাদার ছেলে বসুদেবের অষ্টম ছেলে শ্রীকৃষ্ণকে কংস মারতে পারেনি। সে এক গ্রামে অন্য এক মায়ের কাছে বড় হচ্ছে। ওই ছোট্ট অংশের মধ্যেই বাকি মহাভারতের ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া হল।

 

ছোটবেলা থেকে অর্জুন ছিল আমার কাছে আইডল। যেন বীরতার পরিভাষা অর্জুন। কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে নানান জনের লেখা মহাভারত পড়তে পড়তে, নানান জনের বিশ্লেষণ পড়তে পড়তে মনে হয়েছে ব্যাসদেব অর্জুনকে বড়সড় পুতুল হিসাবে তৈরি করেছেন। বিধাতার হাতের পুতুল। আর সেই বিধাতা হলেন শ্রীকৃষ্ণ। নারায়ণ তার ইচ্ছা পরিপূর্ণ করার জন্যে অর্জুনকে বেছে নিয়েছেন। তাই তার সব প্রতিদ্বন্দীকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। আর সেই সবেরই প্রতিফলন হল একলব্যের অপসারন, খাণ্ডবদাহনের কারনে অগ্নির অর্জুনকে গাণ্ডীব ধনুক আর তুনীর প্রদান, কর্ণের কবচ আর কুণ্ডল সরিয়ে তাকে দুর্বল করে দেওয়া, ঘটতকচের মৃত্যু ও আরও নানান ঘটনাবলী। একাধিকবার শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে আমরা শুনি তিনি একাই সমস্ত ক্ষত্রিয়কে বিনাশ করতে পারেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে অর্জুনের স্বজনদের প্রতি দুর্বলতার কারনে অর্জুনকে নিজের বিশ্বরূপ দেখান। সমস্ত ঘটনার একটাই প্রতিপাদ্য। তা হল “নারায়নের” ইচ্ছা “নরে”র মাধ্যমে স্বকীয় রূপ দেওয়া।

 

আরে বাবা, সত্যি যদি এক মুহূর্তে সব ধংস করে দিতে পারো তো খামোকা এত সময় নষ্ট করা কেন বাপু? ভেবে দেখো তো একবার যে যোদ্ধারা মরবেই, তাদের জন্যে কত খরচ করা অকারণ| এত যোদ্ধা, অস্ত্র শস্ত্র, চাকরবাকর, তাদের মাইনে – কম কথা? প্রোডাক্টিভিটি কোন জায়গায় নামিয়ে নিয়ে যাওয়া| এক নিমেষের কাজ এত দিন ধরে করা| এই কস্ট কাটিংয়ের যুগে নির্ঘাত বার করে দিতো কোম্পানি থেকে| যুধিষ্ঠির নেহাতই ভালো মানুষ বলে কিছু বলেনি| আর এথিক্সএর কোনো বালাই নেই? কোন আক্কেলে বাপু জয়দ্রথকে ওই ভাবে ঠকিয়ে মারা? ইন্টিগ্রিটি – এক্কেবারে নেই| নাহলে ঘটোৎকচকে ওই ভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দেয় কেউ অর্জুনের জীবন বাঁচানোর জন্যে? আমি তো ভগবানের শুধু গিমিক তৈরী করা ছাড়া কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না|
এখানেই মনে প্রশ্ন জাগে যে ঈশ্বরও কি সাধারণ মানুষের মতো লোভী? তারও লোভ নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করা মানবসমাজে? তিনিও চান যে লোকে তাকে ভয় করুক, তার পুজা করুক? ব্যাসদেবের এই অসাধারন এবং খুব সম্ভবত বিশ্ব সাহিত্যে অতুলনীয় কাব্যের এই একটা দিক এবং কারন আমি বুঝিনি। ঈশ্বর আছেন কি নেই, এই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা আছে কিনা জানি না। কিনতু  যদি থেকে থাকেন তাহলে সামান্য প্রতিষ্ঠা পাবার এই অক্লান্ত প্রচেষ্টা কোনোমতেই আত্মস্থ করা যায় না। অন্তত আমি পারিনি।
আপনাদের মধ্যে কেউ যদি এই অর্বাচীনের এই অবান্তর এলোমেলো ভাবনার উত্তর জেনে থাকেন, তো অবশ্যই জানাবেন।

 

জীবনবাবু

অনেক দিন আগের একটা লেখা পোস্ট করলাম…..যদি কারুর ভালো লাগে তো জানাবেন

জীবনবাবু

এই গত পরশুর কথা…..আমাদের বাড়ির কাছাকাছি বেশ কয়েকটা পার্ক আছে….তার মধ্যে একটা বিশাল তো বড়….আর বাকিগুলো মাঝারি মাপের….স্বভাবতই বড়টার ই আকর্ষণ সবার কাছে বেশি…তাই সেটাতে বড্ড ভিড় হয়….আর বাকিগুলো বেশ খালি পড়ে থাকে…..এখানকার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের একটা বড় মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছি….সমস্ত পার্ক এ পুরো টা বেষ্টন করে সিমেন্ট এর হাঁটার জায়গা করে দেওয়া হয়েছে…..বেশ সুন্দর ফুলের গাছ…..নানা গাছ দিয়ে ঘেরা……পার্ক এ গেলেই বেশ ভালো লাগে মনটা….মজার জিনিস টা হলো সব পার্ক এ বড় বড় করে লেখা থাকে ক্রিকেট, ফুটবল ইত্যাদি খেলা চলবে না……তাই পার্কগুলো তে বেশির ভাগ সময় হয় একেবারে কচির দল নাহলে বুড়ো আর আধবুড়োর দলই দেখা যায়…..গম্ভীর মুখে হাতে একটা লাঠি নিয়ে হাঁটার প্রতিযোগিতায়ব্যস্ত…..
কুকুর টুকুর তো খুব একটা দেখতে পাই না পার্ক এ…..তাই লাঠির উপযোগিতা টা ঠিক জানা নেই…..হয়তো বা নিজেদের মধ্যে যদি লাঠালাঠির প্রয়োজন হয় সেই জন্যে সাথে রাখা…..যে বয়সে খেলাধুলা করলে শরীর তৈরি হয় আর চল্লিস না হতেই ডায়াবেটিস বা অন্য কারণে কনস্টিপেটেড মুখে লাঠি হাতে পার্কে হাঁটার প্রয়োজন কম পড়ে, তাদের কেই পার্ক থেকে সরিয়ে রেখে দিয়েছে….বলিহারি এদের সৌন্দর্য বোধ আর সাস্থ্য সচেতনতা…….যাকগে,আসল কথাটাই ভুলতে বসেছিলাম……একটু রাত্রির দিকে গেছিলাম পার্কএ…..নেহাৎই গাছ পালার ঠান্ডা হাওয়া খাবার লোভে….কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করার পর, একটা বেঞ্চে বসে আরাম করছি….এই ফাঁকে বলে রাখি আমি একেবারেই স্বাস্থ্য অ-সচেতন!!!! তাই সকালে উঠে হাঁটা, জিম যাওয়া প্রভৃতি আমার দ্বারা হয় না….আমি যখন হাঁটতে ভালো লাগে তখনই হাঁটি…যা বলছিলাম….বসেছিলাম গাছের তলায় একটা বেঞ্চের ওপর…..অনেকটা ভাবনাশূন্য মনে…..এমন সময় দেখি এক ভদ্রলোক এগিয়ে আসছেন আমার ই বেঞ্চের দিকে…..মনে মনে ভাবলাম এ আবার কোন আপদ….সারা পার্কে এত জায়গা রয়েছে…বেছে বেছে আমাকেই জ্বালাতে আসা কেন…..কিন্তু যেহেতু সরকারী সম্পত্তির ওপর সবার সমান অধিকার, তাই ভিতরে ভিতরে গালাগাল দিলেও মুখে কিছু বলতে পারলাম না…..বেশ বড় লম্বা বেঞ্চ….আমি একটু বেশি ধারের দিকে সরে গেলাম যাতে দূরত্ব কিছুটা বেশি থাকায় কথাটথা না বলতে হয়….উনি এসে ওপাশের দিকে বসলেন……লম্বা দোহারা চেহারা……বয়স বোঝা খুব মুশকিল….কিন্তু মুখটা দেখে মনে হলো না যে খুব খুশিতে আছেন….মিনিট কয়েক চুপচাপ থাকার পর দেখি আমার পাশে চলে এসেছেন….দেখতেও যেন সামান্য বদলে গেছেন…..যাই হোক……আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন…….বললাম……গম্ভীরহয়ে মন্ত্যব্য করলেন “বাহ, ছোট্ট, কিন্তু বেশ বিটকেল নাম”…..মনে মনে ওনার ঊর্ধতন সাত পুরুষের পিন্ডি চটকে জিজ্ঞাসা করলাম “তা মশাইয়ের সহজ সরল নাম তা যদি জানাতেন”…..ছোট্ট হাসি হেসে বললেন “জীবন”……মনের মধ্যে প্রতিহিংসার আগুন জ্বলতে থাকলেও নামটা সত্যি এত সহজ যে চুপচাপ থাকা ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না…..জীবনবাবু বললেন “আজকাল কেউ কথা বলতে চায় না……হয় কানে ইআর ফোন লাগিয়ে গান শুনছে ভাবলেশহীন মুখে, নাহলে টকাটক মোবাইল এ ম্যাসাজ পাঠাচ্ছে অনবরত….নাহলে কম্পিউটার এ বসে সারাক্ষণ কিছু না কিছু করছে…….আজকাল আবার ফেসবুক চালু হওয়াতে সবাই যা কিছু বলার সব সেখানেই বলছেন….মায় কিছু মন্ত্রীও নাকি যা বলার সব ফেসবুক এই বলছেন…..তা এই সব গোলমেলে ব্যাপারে আমার তো মশাই প্রাণ বেরিয়ে যাবার যোগাড়……একটা কথা বলার লোক পাই না…..আজ অনেক দিন পর আপনাকে দেখে ভাবলাম আপনি হয়তো কথা বলতে গেলে পালিয়ে যাবেন না বা গালাগাল করবেন না…..মোবাইলহীন আর কোলে কম্পিউটার না দেখে একটু সাহস করে এলাম আর কি”…….ভদ্রলোকের কথা শুনে হঠাৎ আমারও মনে হলো যে সত্যি তো….আমি ও বোধহয় একজন কাউকে খুঁজছিলাম কথা বলার জন্যে…….অভ্যেসবশত ওনাকে আসতে দেখে বিরক্ত হয়েছিলাম…..আমার ও মনটা বেশ প্রসন্ন হয়ে উঠলো জীবনবাবুকে পেয়ে……তা এদিক সেদিক কথা বলতে বলতে পরিবারের কথা উঠলো….জীবনবাবু বেশ কথা বলতে পারেন…..আর সঙ্গী পেয়ে কথা বলেতে পেরে দেখলাম ওর মুখটা বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে…..সাথে সাথে কেন জানিনা আমার ও মনের ভিতরে বেশ একটা চনমনে ভাব জেগে উঠেছে…..জীবনবাবুকে বললাম যে মিমি আর সোনাই, মানে আমার বউ আর ছেলে মুম্বাই গেছে ছুটি কাটাতে…..মুখে যতই বড়াই করি না কেন, ওরা বাড়িতে না থাকলে বড় খালি খালি লাগে……সারাক্ষণ মিমির মুখঝামটা না শুনলে রবিশঙ্করের সেতারও বেসুরো লাগে….সোনাই এর পিছনে না লাগতে পারলে, ওর সাথে না খেলতে পারলে মনে হয় যেন সারাদিন কিছুই করলাম না……জীবনবাবু মুচকি হেসে বললেন যে সে তো জীবনের অঙ্গ…হাসি তা দেখে লোকটাকে ভারী ফিচেল মনে হলো….মনে হলো আমার এই খালি খালি লাগাটা দিব্যি উপভোগ করছেন…..কথা ঘোরাতে জিজ্ঞাসা করলাম ওর পরিবারের কথা……শুনেই বললেন “দাঁড়ান মশাই, সবার সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দিই……”..বলেই ডাক পাড়লেন “ওগো শুনছ, সবাইকে নিয়ে একবার এদিকে এস না…..এই ভদ্রলোকের সাথে তোমাদের আলাপ করিয়ে দিই”…..বলে আমাকে বলেন যে ওনার বিশাল পরিবার….আর সব সময় সবাই কাছাকাছি থাকেন….প্রায় সাথে সাথেই বেশ কয়েকজন আমাদের বেঞ্চ এর কাছে এসে গেলেন….একজন মহিলাকে দেখিয়ে উনি পরিচয় করিয়ে দিলেন ওনার স্ত্রী বলে….নাম জানালেন “দুঃখ”……বেশ মজা লাগলো নামটা শুনে….জিজ্ঞাসা করলাম “এমন অদ্ভুত নাম কেন?” উনি কি সারাক্ষণ দুঃখে থাকেন নাকি? জীবনবাবু হো হো করে হেসে উঠলেন….এবারে জীবনবাবুর বদলে দুঃখদেবী নিজেই উত্তর দিলেন “আমি দুঃখে থাকি না. কিন্তু আমার নামটাই এই…..আর আপনার জীবনবাবু আমাকে ছেড়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না……সেই জন্যেই তো আমি ওনার স্ত্রী”…..বেশ মজা লাগলো….বললাম “আপনি স্ত্রী এমন ভাবে বলছেন যেন ওনার অন্য কোনো মহিলার সাথেও সম্পর্ক আছে”……দুঃখদেবী হা হা করে হেসে উঠলেন……বললেন “কোন পুরুষেরই বা থাকে না শুনি? আপনার নেই?” এমন সোজা সাপ্টা জবাব শুনে মিথ্যে বলতে মন চাইলো না…..বললাম “দেখুন একেবারে সত্যি কথাটাই বলি আপনাকে….কিন্তু কখনো যেন আমার স্ত্রী মানে মিমির সাথে দেখা হলে বলে বসবেন না…..ভালো তো বেশ কয়েকজন কে লাগে….কিন্তু সে কিছুক্ষনের জন্যে….মিমিকে ছেড়ে বেশিক্ষণ থাকাটা মুশকিলের”…..ভদ্রমহিলা দেখি বেজায় খুশি….বললেন “এই একটা পুরুষ মানুষের মতো কথা বললেন….আপনার জীবনবাবু তো ভয়েই মরলেন…..কোনদিনই স্বীকার করতে চান না…..কি গো দেখলে? এই ভদ্রলোক তোমার মতো নয়….”…..জীবনবাবু আমতাআমতা করে বললেন “আমার আবার কাকে ভালো লাগে?” সারাক্ষণ তো তূমি আঠার মতো সেঁটে থাকো”….দুঃখদেবী মুখঝামটা দিয়ে উঠলেন….”ইসস….আমার মহাপুরুষ এলেন রে…..আমি একটু এদিক ওদিক গেলেই যে সটকে পর পড়শীর বাড়িতে তা কি আমি জানি না? ওই হাড়হাভাতে মেয়েটার কোনো কাজ নেই…..সারাক্ষণ তাল খুঁজতে থাকে কখন আমি একটু নেই….অমনি দুজনে শুরু করে দেবে ফস্টিনস্টি….একটু যে বাপের বাড়ি যাবো এক সপ্তাহের জানে তারও জো নেই বাপু!” জীবনবাবু দেখলাম একটু সিঁটিয়ে গেছেন বউ এর ধমকানি খেয়ে……ভদ্রলোককে এমনিতে তো বেশ গোবেচারা দেখতে….ওনার যে আবার গার্লফ্রেন্ড আছে তা ওনাকে দেখে খুব একটা বোঝা যায় না……অবশ্য আমাকেই বা দেখে বোঝা যায় নাকি? যাইহোক ভদ্রলোক কে বাঁচানোর জন্যেই দুঃখদেবী কে বললাম “সেই মেয়েটি খুব সুন্দর দেখতে বুঝি?” বলেই বুঝলাম বেমক্কা একেবারে ভুল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছি…..মেয়েরা সব সইতে পারে, কিন্তু নিজের থেকে সুন্দর কারুকে স্বামীর ভালো লাগে, সেটা নৈব নৈব চ….সাথে সাথে দুঃখদেবী একেবারে ফোঁস করে উঠলেন…..”সুন্দর তো দেখতেই, আর ছলাকলা কি কম জানে? সারাক্ষণ সেজেগুজে তৈরি…..দেমাকে পা পড়ে নামাটিতে…..লিপিস্টিকের কি বাহার…..জানি না আরও কি সব লাগায় নিজেকে সুন্দর দেখাতে…..আসলে ওই সব মাখার জন্যেই যা সুন্দর দেখায়…..জানিনা আজকাল তো নানা রকমের কসমেটিক সার্জারি হয়েছে…..নাক ঠিক করা, গালের চামড়া টানটান করা, আরও সব নানা জায়গায় কতকিছু করে শুনছি…..খালি ছেলেদের মাথা খাওয়া….আর ছেলেগুলোর তো জিভ লকলক করছে….যেই দেখলো অমনি ছুটেছে….আরে বাপু শুধু ওপরটুকু দেখে অত নোলা কেন? ওই লিপিস্টিক তুলে, গালের রং তুলে দেখ, সব নেশা ছুটে যাবে…..ইচ্ছা করে বেশ কষিয়ে দিই ক ঘা মুড়োঝাঁটার বাড়ি”……বুঝলাম যা ভুল করার করে ফেলেছি…..এই আগুনে মেজাজ সামলানো বেশ মুশকিল..কিন্তু ওই সুন্দরী মেয়েটাকে দেখার লোভ ও ছাড়তে পারছিলাম না……বললাম দুঃখবৌদি, আপনাকে যা দেখতে না…..আপনার ঐসব মেয়েরা ধারেকাছে আসে না…..সত্যি প্রথমে দুঃখবৌদিকে দেখে তেমন কিছু লাগে নি….কিন্তু আসতে আসতে মনে হছিলো মুখের যতই ধার থাকুক না কেন, কোথায় যেন একটা লক্ষীশ্রী আছে মহিলার মধ্যে…..কিছুক্ষণ সাথে থাকলে বোঝা যায় মহিলা বেশ স্থিতধী আর কথার ধার যতই থাকুক মনটা খারাপ নয়…….উনি বললেন “জানতাম, আপনারও নোলা লকলক করে উঠবে…..ডাকছি তাকে….কিন্তু আগে থেকে সাবধান করে দিই…..এইসব মেয়েরা কারুর সাথে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না….একবার যদি ওর ফাঁদে পা দিয়েছেন তো গেছেন…….সারাক্ষণ লুকোচুরি খেলতে থাবে আপনার সাথে”……তারপর জীবনবাবুকে বললেন “কি গো ডাকবে নাকি একবার তোমার গার্লফ্রেন্ড কে? এঁকেও একবার দেখিয়ে দাও মহারানীকে”……এমন ভাবে ধরা পড়ে যাবো তা ভাবিনি…..কিন্তু কি আর করা…ইন্দ্রিয় বড় দায়! আমার মুখ দেখে জীবনবাবুও বোধহয় ভিতরের ব্যাপার টা বুঝলেন…..আর আমার সাথে পরিচয় কারবার জন্যেই হোক বা নিজের ভালোলাগা টা  চরিতার্থ করার জন্যেই হোক ডাক দিলেন “সুখ, তুমি কোথায়? একবার এসো না এদিকে…..এই ভদ্রলোক তোমাকে দেখার জন্যে বড় ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন”….উত্তর শুনলাম “আসছি, এক মিনিট”….সাথে সাথে দুঃখবৌদি বলে উঠলেন “ওই, নির্ঘাত লিপিস্টিক টা ঠিক করে নিচ্ছে…মরণ”……তার পরেই হিল জুতোর টকটক শব্দ শুনতে পেলাম…..যাকে দেখলাম তাকে দেখে মাথা ঘুরে যাবার দাখিল……চোখ ধাঁধানো সুন্দরী……পা থেকে মাথা অবধি……জীবনবাবুর ও দেখি আমার মতই অবস্থা…….মাথার মধ্যে রিমঝিম করতে লাগলো…..মনে হলো একে ছাড়া চলবে না……সেই সময় সুখদেবী কথা বলে উঠলেন….গলার স্বর যেন বীনার আওয়াজ…..মিষ্টি করে একেবারে আমেরিকান একসেন্ট এ বলেন “হেল্লো……কেমন আছেন? খুব ভালো লাগলো আপনার সাথে আলাপ করে……জীবনবাবু, দুঃখবৌদি কই?”….জীবনবাবু ও যেন জীবন ফিরে পেলেন এমন ভাবে বললেন “জানো তো তুমি থাকলে ও আমাকে একা ছেড়ে দেয় কিছুক্ষনের জন্যে…..এই এসে পড়লো বলে”……সুখদেবী ব্যস্ত হয়ে বললেন “ওই ওর দোষ….আমাকে দুদন্ড আপনার কাছে থাকতে দিতে চান না”…তারপর আমাকে বললেন “আপনার মোবাইল নম্বর টা দিন….মাঝে মাঝে যোগাযোগ করা যাবে”…..আমি শিগগির করে বলে দিলাম….উনি ওনার মোবাইলএ নোটে করে নিলেন…দামী মোবাইল….তারপর আমাদের দুজনকে মিষ্টি হেসে বললেন “বাই, আমার একটা পার্টি আছে, যেতে হবে”……সুখদেবী আমাকে আর জীবনবাবুকে ক্ষণেকের জন্যে দেখা দিয়ে চলে গেলেন……মনের মধ্যে ওকে পাবার ইচ্ছাটা আরও প্রবল করে দিয়ে অধরা থেকে চলে গেলেন অন্য পার্টিতে……ততক্ষনে দুঃখবৌদি এসে পড়েছেন……কাছে এসে আস্তে করে বললেন “এবার হাঁ করা মুখটা বন্ধ করুন”……লজ্জা পেয়ে গেলাম…..কিন্তু তার গলার স্বরে অদ্ভুতভাবে আপনজনের গলা শুনতেপেলাম….জীবনবাবুও মনে হলো হলো সুখদেবীকে হারাবার কষ্ট ভুলে ধীরে ধীরে বৌদির কাছে এসে দাঁড়ালেন……বৌদি জীবনবাবুর হাত ধরে অদ্ভুত মমতাময়ী চোখে তাকালেন স্বামীর দিকে…..আমার মনে হলো দুঃখবৌদি অসাধারণ রূপসী, বীণানন্দিত কন্ঠস্বরের অধিকারিনী না হলেও জীবনবাবুর একান্ত আপনজন……তাঁকে ক্ষনেক্ষনে হারাবার ভয় নেই…..তাঁর হাতের শান্ত স্নেহের পরশে জীবনবাবুর মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি দেখতে পেলাম…………..এমন সময় ডাক শুনলাম “বাবু অনেক রাত্রি হয়ে গেছে….বাড়ি যান”…..চমকে উঠে দেখি চৌকিদার….ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত্রি একটা বাজে…..আশে পাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজে পেলাম না….চৌকিদারকে জিজ্ঞাসা করলাম “এখানে একজন সাহেব আর মেমসাহেব এসেছিলেন….ওরা কোথায় গেলেন?”…….চৌকিদার বললো যে সেখানে নাকি আর কেউই ছিলো না…..ও আমাকে অনেকক্ষণ থেকে বেঞ্চে বসে ঘুমোতে দেখছে….অনেক রাত হয়ে গেছে দেখে জাগিয়ে দিলো…..মাথার মধ্যে তখন সবকিছু গুলিয়ে গেছে…..তাহলে কি স্বপ্ন দেখছিলাম…….ওকে জিজ্ঞাসা করলাম ওর নাম কি…..বললো “আমার নাম জীবন”……….আবার চমকালাম……একেবারে রোগাপাতলা, ঠিকমতো খেতে পায় কিনা সন্দেহ, কিন্তু মুখের হাসিটা ভারী মিষ্টি…..জিজ্ঞাসা করলাম “সারা রাত জেগে পাহারা দাও যাতে অন্যরা শান্তিতে ঘুমোতে পারে….এমন জীবন ভালো লাগে?”…..একগাল হেসে জবাব দিলো “অন্য কে খুশি করার মধ্যেই তো আনন্দ….এটাই আমার জীবন “……..এক সন্ধ্যেতে সারা জীবনের শিক্ষা নিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে রওনা হলাম ধীর পায়ে………

পর্যটন বাঁচাও – তৃতীয় ও শেষ পর্ব

বড় প্রশ্ন হল পর্যটনের সাথে যুক্ত কারা? বরঞ্চ প্রশ্নটা করা উচিত কারা যুক্ত নয়। তাহলে লিস্টটা ছোট হবে। আমি আপনি থেকে শুরু করে পাহাড়ী বাঁকের পাশে চারখানা বাঁশের উপর একটা টিনের চালের নীচে ছোটো কেটলিতে চা বানানোর বাচ্চা ছেলেটা অবধি পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত। এইখানে বোধকরি দু-একটা জিনিস একটু পরিস্কার করে বুঝে নেবার দরকার আমাদের। ট্যুরিস্ট কা’কে বলা হয়। যে কেউ নিজের থাকবার জায়গার বাইরে গিয়ে অন্য কোথাও এক বছরের কম থাকলেই থাকলেই তাকে ট্যুরিস্ট বলা হবে। আর তা বেড়াবার জন্য হতে পারে, কাজের কারনে হতে পারে অথবা সামাজিক কারনে গেলেও হতে পারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানালিতে গেলেও আপনি পর্যটক। আবার মাসতুতো বোনের দেওরের পাড়াতুতো দিদির সই এর ছেলের উপনয়ন উপলক্ষে ভিলাই গেলেও আপনি ট্যুরিস্ট। আবার শুধু “জয় মাতাদী” ধ্বনি তুলে এক সেকেন্ডের জন্য বৈষ্ণবদেবী দর্শনে গেলেও আপনি ট্যুরিস্ট। আর আমরা ট্যুরিস্টরা যাদের থেকেই কোনো না কোনো সার্ভিস বা সেবা নেই, তারা সবাই পর্যটন শিল্পের অংশ। কিনতু এই এত ছড়ানো একটা শিল্পকে বাগে আনতে হলে আগে তো এর পরিসর ছোটো করতে হবে। তাই পর্যটন পরিসেবার সাথে জড়িতদের কয়েকটা বিশেষ ভাগে বিভক্ত করা হয়:

১) হসপিটালিটি বা আতিথেয়তা সম্বন্ধিত অর্থাৎ সবরকম হোটেল ও রেঁস্তোরা

২) যানবাহন পরিসেবা সরকারি ও বেসরকারি

৩) দ্রষ্টব্য স্থান যারা পরিচালনা করেন

৪) ট্যুর অপারেটর

এদের ছাড়া পর্যটনের সাথে জড়িত হলেন সরকার আর আমরা, অর্থাৎ আপনি আমি যারা কোনো কারনে নিজের থাকার জায়গার বাইরে যাই। পর্যটনকে বাঁচাবার দায়িত্বও এদের সকলের। আর পাঁচভূত এক হলে যা হয়, দায়িত্বটা কেউই নিতে চায় না। সবাই ভাবে আমি আমারটা দেখি। বাকি সব জাহান্নমে যাক। তখন আমরা এইটা ভুলে যাই যে জাহান্নমে দু-চারজন করে যেতে যেতে জন্নতটাই একদিন পুরোটাই জাহান্নমে পরিনত হয়ে যাবে। সেদিন আমরা চাই বা না চাই আমাদেরও সেই জাহান্নমই থাকবে নসীবে।

খুব ছোট করে বললে পর্যটনের তিন ধরনের প্রভাব পড়ে কোনো জায়গার ওপর। প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক। পাহাড় ভেঙ্গে গাছপালা কাটাকুটি করে আমরা সম্পূর্ন ইকোসিস্টমটাই নষ্ট করে দিই। এটাকে মাপা হয় কার্বন এমিশন বা কার্বন ফুট প্রিন্টের মাধ্যমে। তার সাথে যোগ করা হয় ল্যান্ড ইউস বা ভূমির ব্যবহারের পরিবর্তন। পর্যটন শিল্প পৃথিবীর মোট কার্বন এমিশনের ৫% এরও বেশির জন্য দায়ী। সব থেকে বেশি কার্বন ফুট প্রিন্ট হল এয়ারলাইন ইন্ডাস্ট্রির। বাকিরাও খুব একটা কম যায় না। পর্যটনের কারনে জল আর বিদ্যুতের ব্যবহারও ভীষনভাবে প্রভাব ফেলে প্রকৃতির ওপর। অর্থনৈতিক দিক থেকেও পর্যটন যেমন কোনো জায়গাকে অনেক উন্নত করে তুলতে পারে, তেমনই ভীষনভাবে পরনির্ভরশীলও করে তুলতে পারে। বর্তমানে শেষেরটার প্রবনতা বেশি দেখা যায় কারন সমস্ত ব্যাবসা কিছু মুষ্টিমেয় ব্যাবসায়ী বা সংস্থার হাতে চলে গেছে আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা  বাইরের লোক যাদের ওই জায়গার সাথে পয়সা রোজগার ছাড়া অন্য কোনো  যোগসূত্র নেই। আর সামাজিক ক্ষেত্রেও একই জিনিস দেখা যায়। স্হানীয় কালচার বা সংস্কৃতি থাকলো না গেল তা নিয়ে পর্যটক বা ব্যাবসায়ী কারুরই মাথাব্যাথা নেই।

এই খিচুরি প্রকৃয়াতে সুষ্ঠ পরিচালনা সব থেকে জরুরী। আর এর মুখ্য দায়িত্ব সরকারের, যিনি রেগুলেটরি পলিসি বানাতে পারেন। কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন যখন দেখা যায় একজনের কাজের জন্য অন্যজনকে ভুগতে হচ্ছে। পর্যটনের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। আর সরকার সেখানে পুলিসের দায়িত্ব পালন করবে নিয়ম তৈরী করা ও সবাই নিয়ম মেনে চলছে সেটা নিশ্চিত করার জন্য। আমরা পর্যটনের জন্য কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনেকটাই কমিয়ে ফেলতে পারি যদি সদিচ্ছা থাকে আর সঠিক টেকনোলজির ব্যবহার করা হয়। আর তার জন্য কোনো জায়গার ক্যারিং ক্যাপাসিটি অর্থাৎ পর্যটনের সর্বাধিক মাত্রা নির্ধারণ করা সবার আগে দরকার। আর সেই সাথে প্রয়োজন ওয়েলফেয়ার আ্যনালাইসিস এর। যাতে একজনের ওয়েলফেয়ার বাড়াতে গিয়ে অন্যের অকল্যাণের কারন না হয়ে বসি। অবশ্য যতটা সহজ ভাষায় আমি এটা লিখলাম, কাজে এটা করে দেখানোর জন্যে খুব বেশি দূরদৃষ্টি আর পর্যটন শিল্প সম্বন্ধীয় জ্ঞানের প্রয়োজন। দূর্ভাগ্যবশতঃ,  দুক্ষেত্রেই এলেমদার সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমাদের পলিসিও পলিসি মেকারের ইলম বা এলেমের উপযোগী হয়ে খাতায় কলমে শোভা বৃদ্ধি করে।

হালে বেশ কিছু পরিবর্তন নজরে পড়ে। বিশেষ করে কিছু নামী প্রতিষঠানের ক্ষেত্রে। যেমন এল ই ডি লাইটের ব্যবহার, ব্যবহৃত জলকে আবার ব্যবহার করা, গ্রীন বিল্ডিং প্রচলন ইত্যাদি। আশা করা যায় ভবিষ্যতে সরকারী হস্তক্ষেপে এগুলো ভবিষ্যতে বহুলাংশে বাড়বে। সাথে সাথে ট্যুরিস্টদেরও দায়িত্ব নেবার সময় এসেছে। পরিবেশ সচেতনতা তার মধ্যে অন্যতম। আমরা সবাই বোধকরি জানি আর চেষ্টাও করে থাকি প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, জলের বোতল ইত্যাদি এদিক ওদিক না ফেলা। কিন্তু সাথে সাথে বেশ কিছু জিনিস আরও আমরা করতে পারি। স্হানীয় খাবার খাওয়া, হোমস্টে তে থাকা, জল আর বিদ্যুতের অপচয় না করা, স্হানীয় মানুষের সাথে মেশা, তাদের সংস্কৃতিকে জানা ও সম্মান দেখানো। সব থেকে বড় বোধকরি নিজেকে ওই জায়গার সাথে একাত্ম বোধ করা। যেখানে গেছি সেখানকার মত থাকতে পারলেই অনেক সমস্যার সমাধান নিজের থেকেই হয়ে যায়। অনেকে আছেন যারা কোথাও বেড়াতে গেলে বাড়ীর মতো বা তার চেয়েও বেশি স্বাচ্ছন্দ খোঁজেন। বলা বাহুল্য ব্যবসায়ীরা পয়সা পেলে সব রকম স্বাচ্ছন্দ দেবার জন্য তৈরী থাকবে। তার জন্য স্থানীয় মানুষ বা প্রকৃতির কোনো মূল্যই থাকে না। আমাদের জায়গাপোযোগী চাহিদা হয়তোবা অনেকটাই ভূমিকা পালন করতে পারে সেখানকার সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য। পর্যটন যদি বাঁচে তো আমাদের আনন্দও বেঁচে থাকবে। আর তা থাকলে আমাদের সাথে সাথে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও পৃথিবীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবার সুযোগ পাবে।

দেখা হবে আপনাদের সাথে কোনো নির্জন পাহাড়ে নির্মল বাতাসে বসে রাস্তার পাশের চা’য়ের দোকানে বসে চা আর ম্যাগি খেতে খেতে।

পর্যটন বাঁচাও – দ্বিতীয় পর্ব

পর্যটনের ইতিবাচক দিক অনেক। আর তা যে শুধু ট্যুরিস্টদের জন্য, ত নয়। স্হানীয় অর্থনীতির জন্য পর্যটন অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু পর্যটনের এই ভূমিকা পালন করা তখনই সম্ভব হয় যখন পর্যটনকে সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে বিকাশ করার চেষ্টা হয়। নতুবা পর্যটনের ভালো দিকের থেকে খারাপ দিকটা বেশি প্রবল হয়ে দেখা দেয়। আর বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায় যে আয় বাড়ানোটাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে ওঠাতে খারাপ দিকগুলোর দিক থে অত্যন্ত সুচারুরূপে মুখ ঘুরিয়ে রাখা হয়। দু একটা মজার উদাহারন দিই। আপনারা সবাই জানেন যে নেপাল পৃথিবীর অন্যতম দেশ যেখানে নানান দেশের মানুষ আসে পর্বতারোহনের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই পর্বতারোহন জড়িত বিভিন্ন ব্যবসা থেকে নেপাল প্রচুর আয় করে। মজার কথা হল সারা বছরে যা আয় হয় তার মাত্র ১.৫ শতাংশ থাকে নেপালের এই পার্বত্য অন্চলের উন্নয়নে ব্যয় করার জন্য এবং স্হানীয় মানুষের আয় হিসাবে। বাকি সবটাই বাইরে চলে যায়। ভাবুন, যারা সারা বছর কাজ করছে, যেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, যেখানকার লোকের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রভাবিত হচ্ছে, লাভের ভাগে তাদের স্হান নেই।

এই বছরেই আমরা বেড়াতে গেছিলাম হিমাচলের প্রত্যন্ত অন্চল রকছাম, ছিটকুল ইত্যাদি জায়গায়। রকছামে রাস্তার একদিকে একটা হোটেল। অন্যদিকে গ্রাম। গ্রামবাসীরা গ্রামের চৌহদ্দি ঘিরে নিয়েছে বেড়া দিয়ে। এবং তা এমনভাবে যে অনেক কিছুই বাইরে থেকে দেখা যায় না। আপাতদৃষ্টিতে এটা খুব স্বাভাবিক নয়। আর বেড়াও সামান্য কাঠের যা আর যে কারনেই হোক, সুরক্ষার জন্য নয়।এর একটাই কারন হতে পারে আর তা হল অবান্ছিত লোকজন দূরে রাখা আর তাদের নজর থেকে গ্রামের আব্রু বাঁচিয়ে রাখা। রকছামের হোটেলটা হালে হয়েছে। আর তার মালিকানা বাইরের এক ব্যাবসায়ীর। রকছামে অন্য কোনো ট্যুরিসম আ্যকটিভিটি নেই। আর সেই কারনে গ্রামের কারুর কায়মি স্বার্থ বা ভেস্টেড ইন্টারেস্ট নেই ট্যুরিসমের প্রতি। তাই তারা নিজেদের সাতন্ত্র বজায় রাখতে গ্রামকে আলাদা করে রেখেছে।একবার ভাবুন আমাদের পাড়ার মধ্যে সর্বক্ষন নতুন মানুষ ঘুরে বেড়ালে আর আমাদের বাড়ির দিকে তাকাতে থাকলে আমরা কতটা অস্বস্তি বোধ করব। বাংলায় তো এখন “বহিরাগত” শব্দটা বহুল প্রচলিত আমাদের রাজনীতিবিদদের কল্যানে। আর পর্যটনে এই বহিরাগতরাই স্হানীয় লোকেদের প্রতিদিনের জীবনে বড় অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। ইচ্ছা থাক বা না থাক, তারা পর্যটকদের এড়াতে পারে না।

আর তার ফলে নানান অবান্ছিত ঘটনাপ্রবাহকেও এড়াতে পারে না। সব থেকে বেশি পরিবর্তন হয় প্রাকৃতিক আর সাংস্কৃতিক পরিবেশের। দূষন থেকে শুরু করে শহুরে সভ্যতার খারাপ দিকগুলো ক্রমশ চেপে বসতে থাকে। হাজার চেষ্টা করেও তার থেকে নিষ্কৃতি পায় না একসময়ের সহজ সরল মানুষগুলো। মার্কেট ডায়নামিক্সের কবলে পড়ে বেচারারা বেশির ভাগ সময়েই নিজেদের সহজ স্বভাব বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় বেঁচে থাকার চেষ্টায়। এর পিছনের মূল কারন হল পর্যটন ব্যাবসাকে যেমন খুশি সীমাহীন ভাবে বাড়াতে থাকা। আর তার ফলস্বরূপ সবুজের নিশ্চিন্হ হয়ে যাওয়া, বাতাসে ধোঁয়া, চতুর্দিকে হোটেলের ছড়াছড়ি, গাড়ীর কল্যানে মানুষের হাঁটার জায়গা না থাকা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্য আরও হাজার উপসর্গ। এর বেশির ভাগটাই দেশের পলিসি মেকারদের বদান্যতায়। স্হানীয় মানুষদের কোনো গাছ কাটা বারন তা রান্না বা শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্যই হোক না কেন। যাতে প্রকৃতির হানি না পৌঁছায়। কিন্তু যথেচ্ছা হোটেল বানানোর জন্য বিশাল জায়গা উজাড় করে দিলে কারু চোখে পড়ে না। একসময়ের নির্জন প্রায় জনশূন্য এলাকায় ব্যাবসার কল্যানে ডিজেলের ধোঁয়ায় দম আটকাবার উপক্রম হওয়া এই সরকারী পরজীবিদের নজরে আসে না। আমার বাংলার একটা প্রচলিত বাক্য এখানে খুব মানানসই লাগে। তা হল “সব ব্যাটাকে ছেড়ে এবার বেঁড়ে ব্যাটাকে ধর”। এই স্হানীয় গরীব মানুষগুলোকে নিয়ে যা পার করে দেখাও যে তুমি পলিসি বানানো জান। কেউ প্রতিবাদ করবে না। কিন্তু ভুলেও অর্থবান আর ক্ষমতাবানদের দিকে যেন তাকিও না।

যাকগে, আসল কথায় আসি। যখন থেকে পর্যটনের এই খারাপ দিকটা মানুষের নজরে আসে, পৃথিবীর বহু দেশে আর একটা বিপ্লব শুরু হয়, যদিও ছোটো আকারে। নানান নামের আড়ালে থাকলেও এই বিপ্লবের পরিচিতি হল “সাসটেইনেবল ট্যুরিসম” হিসাবে। উদ্দেশ্য ট্যুরিসমকে টেকসই করা। হাঁসের পেট চিরে সোনার ডিম পাবার চেষ্টা না করে হাঁসের ডিম পাড়ার জন্য অপেক্ষা করা। না হলে যে কোনো জায়গায় পর্যটন শিল্পও স্বল্পায়ু হয়ে উঠবে আর স্হানীয় মানুষদের বরবাদীর কারন হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু চাইলেই তো আর সব কিছু পাওয়া যায় না। তার জন্য দরকার অত্যন্ত ডিসিপ্লিনড পলিসি মেকিং আর সাথে তার নিয়মানুগ বাস্তবায়ন। সাউথ আফ্রিকা, কোস্টারিকা, পেরু, মালয়েশিয়া ইত্যাদি বহু দেশ বেশ এগিয়ে গেছে এই দিকে। সাসটেইনেবল ট্যুরিসমকে বাস্তবায়িত করতে বিভিন্ন জনকে একসাথে এগিয়ে আসতে হয়। সেখানে সরকার, ব্যাবসায়ী, পর্যটক আর স্হানীয় মানুষ প্রত্যেককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়।

ট্যুরিসমের দুটো দিক আছে – ১) মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক আর ২) মানুষের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক। এই দুটোর একটাও যদি ভারসাম্য হারায়, তাহলে পর্যটন সেখানে স্বল্পস্হায়ী হতে বাধ্য। দু-একটা কথায় বিষয় দুটো সম্পর্কে বলি। প্রথমে মানুষ ও প্রকৃতি। আমরা বেড়াতে যাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর অভীপ্সায়। নানান ব্যাবসায়িক কারনে সৌন্দর্য যখন ক্ষীনতর হতে থাকে, তখন স্বাভাবিক কারনে পর্যটকের সেখানে যাবার অভিপ্রায়ও ক্ষীনতর হতে থাকবে। এর উদাহরণ হল সিমলা। সত্যি সিমলা একসময় পাহাড়ের রানী ছিল। এমনকি আমার প্রথম দেখা সিমলাও অতুলনীয় সুন্দর। কিন্তু এখন কেউ আমাকে সিমলা যেতে বললে দশবার ভাবব যে সিমলা গিয়ে সময় নষ্ট করব কি না। আর একটা জায়গা হরিদ্বার। প্রথম গেছি ক্লাস টু’তে পড়াকালীন। কিন্তু সেই প্রথম দেখা হরিদ্বার আজও মনে আছে। একই দশা হয় যদি মানুষে মানুষে সম্পর্ক খারাপ হয়। তার প্রকৃষ্ট উদাহারন হল কাশ্মীর।

পর্যটন বাঁচাও – প্রথম পর্ব

আপনাদের অনেকেরই হয়তো “পর্যটন বাঁচাও” দেখে খুব অবাক লেগেছে। এই লেখাটা তাদের জন্যে যারা ঘুরতে ভালবাসেন, প্রকৃতিকে ভালবাসেন আর এদেশের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষকে ভালবাসেন। তিনটে পর্বে আপনাদের  কাছে আমার ভাবনা তুলে ধরব। আপনাদের মতামত জানার জন্য।

পর্যটন শিল্প, যাকে আমরা সাধারণত ট্যুরিসম বলি, আমাদের সবার অতি পরিচিত  আর প্রিয় একটা বিষয়। দু-চার জন ছাড়া এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল যারা ঘুরতে ভালবাসেন না। এমন কি আমি যে আমি, যে নিজেকে বিশ্বকুঁড়ে বলে অভিহিত করে, সে পর্যন্ত বেড়াতে যাবার কথা উঠলেই তড়াক করে উঠে বসে। সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে অফিস যাবার নামেও যার জ্বর আসে, সেই মানুষই ভোর তিনটের সময় উঠে স্নান সেরে তৈরী হয়ে যায় ঘুরতে যাবার সময়। স্রেফ নেশা। আর অবশ্যই ইতিবাচক নেশা। নতুন জায়গাকে জানা, সেখানকার মানুষের কাছে আসা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির কাছে আসা- এর আনন্দই আলাদা। তাই ট্যুরিসমের নেশা সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে।

আমরা পর্যটকরা ট্যুরিসম বা ভ্রমনকে শুধুমাত্র আনন্দের একটা মাধ্যম হিসাবে ধরে নিই। কিন্তু আসলে পর্যটনের অন্য একটা অনেক বড় দিক আছে যা আমরা বেশির ভাগ সময়েই চিন্তা করি না। পর্যটন হল এক অনন্য শিল্প যা অন্য সব শিল্পের থেকে আলাদা। মজার কথা জানেন, কিছুদিন আগেও, মানে প্রায় বছর তিরিশ আগেও, পৃথিবীর খুব কম দেশেই পর্যটনকে শিল্প হিসাবে দেখা হত। গোটা ব্যাপারটা নিছক ঘুরে বেড়ানো হিসাবেই ভাবা হত। আর ভারতে তো বছর কুড়ি আগেও পর্যটনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নেহাতই তুচ্ছতাচ্ছিল্যজনক ছিল। এটাকে যে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা খুব বেশি লোকের ভাবনার মধ্যে ছিল না। তবু ২০০০ এর দশকের শুরুর দিক থেকে ক্রমশ পর্যটনকে ভারতে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। গত পনেরো বছরে অনেক নথি জমা হতে থেকেছে সরকারের কাছে যে কিভাবে পর্যটনের মান উন্নত করা যায়। কিন্তু এদেশের সব কিছুর মতো, এক্ষেত্রেও কাজের থেকে কথার পরিমান বহুগুন। যেগুলো সহজেই হয়ে যায়, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে এদেশে। কিন্তু যেখানে সত্যিকারের প্রচেষ্টা আর ইচ্ছের প্রয়োজন, তা যেখানে ছিল সেখানেই আছে।

 

এবারে একটু বোধকরি বলা উচিত যে এত কথার অবতারনা কেন করছি। খুব ছোটোর মধ্যে বলে নিই। কারন বেশি লিখলে এই তৃতীয় শ্রেনীর লেখকের লেখা আপনারা কেউ পড়বেন না। এই শর্মার ঘোরার নেশা একেবারে ছোটবেলা থেকেই লেগে গেছে। বাবা মায়ের বদান্যতায় ছমাস বয়সে এলাহাবাদের ত্রিবেনী দিয়ে যে ঘোরা শুরু হয়েছিল, তা এখনও চলেছে। এবং নেশার মাত্রা ক্রমশঃ বাড়ছে। অবশ্য শারীরিক অসুস্হতা অথবা পয়সাকড়ির খুব টানাটানি না পড়লে এই নেশার কোনো চিকিৎসা আছে বলে আমার জানা নেই। আর এই নেশার ক্রমঊর্দ্ধগতি ভুক্তোভোগী মাত্রেই জানেন। আর একটা প্রবল সুবিধা আছে ঘোরার নেশার। কেউ আপনাকে নেশামুক্ত হবার কথা বলবে না। বরং যার ঘোরার নেশা ছিল না, কিছুদিন আপনার সংস্পর্শে থেকে সেও ধীরে ধীরে নেশাগ্রস্ত হয়ে উঠবে।

যে কথায় আসতে চাইছিলাম তা হল যে জায়গাগুলোতে আজ থেকে তিরিশ বছর আগে গেছি, আজ সেখানে গেলে চেনা তো দূরের কথা, মন বড় ভারাক্রান্ত হয়ে আসে। মনে হয় কার শাপে সেই সৌন্দর্যের এই দুর্দশাপ্রাপ্তি। আপনারা অনেকেই নিশ্চয়ই মানালী গেছেন। আমার প্রথম মানালী যাবার সুযোগ হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। সত্যি পাহাড়ী রাজকুমারী ছিল মানালী। বিপাসা নদীর নীল, পাহাড়ের সবুজ আর সাদার সম্মিলীত রুপ তুলনাহীন। ছোট্ট শহরে গুটিকয় হোটেল, বাজার আর সহজ সরল পাহাড়ী মানুষের নিষ্পাপ হাসি। তারপর আরও দুবার মানালী গেছি। শেষবার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। আমার মনে হয়েছিল এ কোন মানালীতে এলাম। প্রকৃতি, মানুষ সবকিছুতেই আমূল পরিবর্তন। অবিশ্বাস শব্দটা যেন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। ট্যুরিস্টরা ওখানকার লোককে বিশ্বাস করে না, আর স্হানীয় লোকেরা ট্যুরিস্টদের অবিশ্বাসের চোখে দেখে। খুব খারাপ লাগলেও এটা বাস্তব।

আর এই একই অভিজ্ঞতা বহু জায়গায়।  সৌভাগ্যবশত ভারতবর্ষের নানান কোনে ঘোরার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর বেশির ভাগ জায়গায়, যেগুলো পর্যটকদের কাছে পরিচিত নাম, সর্বত্র একই অবস্হা। আর ভারতে নয় শুধু। পৃথিবীর বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশের অভিজ্ঞতাই এক। আর এই ঘটনা যখন ঘটছে কারন তো থাকবেই। আর সেই কারণগুলোর মুখ্য হল অর্থনৈতিক। বাকি সব তার উদ্ভাস বা ম্যানিফেস্টেশন। ট্যুরিসম সেক্টর ভারতবর্ষের সবথেকে বড় সার্ভিস সেক্টর। ভারতের জিডিপি’র প্রায় ৭.০% আসে ট্যুরিসম সেক্টর থেকে। আর প্রায় ৯% এমপ্লয়মেন্ট আসে এই একটা সেক্টর থেকে। সুতরাং এ হল সোনার ডিম পাড়া হাঁস। আর সেই ডিম নিয়ে কাড়াকাড়ি চলে সরকার আর ব্যাবসায়ীদের মধ্যে। সরকার চায় যত সম্ভব ট্যাক্স নিয়ে এস খাজানায়। আর ব্যাবসায়ীরা এক পয়সা ট্যাক্স দেবার আগে একশ পয়সা কামাবার রাস্তা বার করে ফেলে। আর সেই ফায়দা অবশ্যই তোলে ট্যুরিস্টরাও। তাদেরও ভাবনা পয়সা যখন খরচা করছি পুরো উসুল করে নেব।

আর এই তিন মতলববাজেদের ফন্দিফিকিরে নাজেহাল হয় দুজন। একজন হল প্রকৃতি। মূক সহনশীল। বেআব্রু হয়েও প্রতিবাদ জানায় না অপারগ না হলে। আর দ্বিতীয় হল স্হানীয় মানুষজন। যাদের নিজস্ব জীবন, সংস্কৃতি, সম্মান, সুরক্ষা সব ক্রমাবক্ষয়ের জালে জড়িয়ে পড়েছে এমনভাবে যে নিস্কৃতি দুরস্ত। যে রাখাল এক সময়ে যেখানে বাঁশী বাজিয়ে ভেড়ার পাল চড়াতো, আজ সে সেখানেই হয়তো মোট বইছে ট্যুরিস্টদের। একসময়ের চারনভূমি আজকে হোটেলে পরিনত হয়েছে। মোদ্দা কথা, একদলের আনন্দের খোরাক জোগাবে আরেক দল সীমাহীন লোভে। মাঝে আরেকদল ক্যাটালিস্টের কাজ করে পয়সা কামাবে ট্যাক্সো বসিয়ে। আর এই তিনের মাঝে পড়ে পিষবে প্রকৃতি আর প্রকৃতির কাছের মানুষেরা।

আড্ডার সেই দিনগুলো

নস্টালজিয়া। লেখার শুরুতে এই শব্দটাই মনে এল। আমি কলকাতার বাইরে হল বহুদিন। কিন্তু কলকাতা শব্দটা মনে এলেই মন ভাল করা আর খারাপ করা, এই দুই অনুভূতি একসাথে হয়। ভাল করা এই কারনে যে একরাশ ভাললাগার স্মৃতি মনে পড়ে যায়। আর মন খারাপ করা কারন সেই ভাললাগাগুলোর পুনরাবৃত্তি সম্ভব না বলে। সব থেকে আনন্দে কাটিয়েছি বোধহয় কলেজ জীবনটা। বাঁধনহীন আনন্দ। গড়পড়তা বাঙ্গালী থেকে আমিও আলাদা নই। তাই একটা “আমি সব জানি” বোধ মনের মধ্যে প্রবল। তার সাথে যোগ হয়েছে কলেজে অনার্স নিয়ে পড়ার অহংবোধ। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বোধবুদ্ধিসম্পন্ন জ্ঞানবান ব্যক্তি। যার পলিটিক্স থেকে খেলা থেকে রান্না সবেতেই বুৎপত্তি ও বোধিপ্রাপ্ত হয়েছে। বলা বাহুল্য যে আমার বাকি বন্ধুরাও সমমাত্রায় বা অধিক মাত্রায় জ্ঞান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে করতেন নিজেদের।

কিন্তু অন্য কেউ ভাবুক বা না ভাবুক, নিজেকে সবজান্তা ভাবার এক বড় সুবিধা আছে নিজের ও সমাজের জন্য। অনর্গল সর্ববিষয়ে কথা বলার লোকের অভাব হয় না। আড্ডায় বক্তার অভাব না থাকলে সোনায় সোহাগা। একটা জিনিসের জন্য আইনস্টাইনের কাছে সব মানুষের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তা হল রেলেটেভিটি কনসেপ্ট। স্পেস-টাইমের কেরামতি বোধগম্য না হলেও, শুধুমাত্র রেলেটেভিটি কনসেপ্টই যথেস্ট। আর সেই রেলেটেভিটি অনুযায়ী আমার বন্ধুদের তুলনায় আমার জ্ঞান অনেকটাই কম সর্বব্যাপী ছিল। তাই শ্রোতার ভূমিকা আমার আড্ডার ক্ষেত্রে বরাবর প্রিয়তর। আড্ডার বক্তা বা শ্রোতা থাকলে স্হান তো থাকবেই। সেই অঙ্ক মেনে আমাদের আড্ডার স্হান ছিল কলেজ স্ট্রীটের বিভূতি কেবিন। কফি হাউসে কালে কস্মিনে পা দিলেও তা আমাদের রোজকার আড্ডামন্দির হিসাবে পরিগনিত হত না।

আমরা বিদ্যাসাগর কলেজে পড়তাম। সাত আট জনের একটা ক্লোসড গ্রুপ ছিল। রন্জনা, সজল, স্বাগতা, অশোক, ঊর্মিমালা, শঙ্খ আর আমি। আরও দু চারজন মাঝে মধ্যে এস যেত কোর গ্রুপের বাইরে থেকে। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই কলেজ স্ট্রীট মার্কেট চেনেন। কলেজ স্ট্রীট বাটার উল্টোদিকের গেট দিয়ে ঢুকলে নাক বরাবর চলতে থাকবেন। রাস্তা শেষ হলে আট দশ পা চলবেন “বাঁয়ে মূড়” হয়ে। ব্যাস, আপনার ডানহাতেই বিভূতি কেবিন। দুপাশে দুটো সিঁড়ি। তিন ধাপ উঠলেই আপনি ঢুকে গেলেন আপনার গন্তব্যে। বাঁ হাতে তিনটে কাঠের খুপরি। একেবারে ডানদিকেও তাই। মাঝের জায়গাটুকুতে দুটো টেবিল। এই কাঠের খুপরিগুলোর দুখানাতে স্যুয়িং ডোর লাগানো একান্ত ব্যক্তিগত আলাপচারীদের জন্য। আর ঢোকার আগে সাইনবোর্ডে দেখতে পাবেন নানান খাবারের লিস্টি। তাতে লান্চ  থেকে স্ন্যাকস সব আছে। বিভূতি কেবিনে আমার কোনোদিন লান্চ বা ডিনার করবার সৌভাগ্য বা প্রয়োজন হয়নি। তাই কেবলমাত্র ফিশ ফ্রাই, কবিরাজী, মোগলাই পরোটা আর বাটার টোস্টের কথাই মনে আছে।

বন্ধুত্বের অলিখিত আইন মেনে প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা আমরা বিভূতি কেবিনে হাজিরা দিতাম। বেশিরভাগ সময় কলেজ থেকেই একসাথে আসা হত। ছুটি বা অন্যদিনগুলোতে যে যার নিজের মতো পৌঁছে যাওয়া। মোবাইল না থাকা কোনোদিন আমাদের যোগাযোগের অন্তরায় হত বলে মনে হয়না। একজন দুজন করে হাজির হতাম। শুরু হত গুলতানি। বিভূতি কেবিনের নির্মলদাকে মনে হয়না কোনোদিনই আমাদের কেউ ভুলতে পারব বলে। ওই আমাদের চা খাবার এনে দিত। খাবারের ভাগটা বেশির ভাগ সময় কম হত, চা টা বেশি। আমাদের সাথে নির্মলদাও টুকটাক আড্ডায় জুটে যেত। প্রায় আমাদেরই বয়সী। খুব হাসিখুশি। ওর জানাই ছিল আমরা কি খাব না খাব। তাই অর্ডার দেবার জন্য অযথা সময় নষ্ট করার দরকার হত না। আমাদের পড়াশুনার জায়গাও ছিল ওই বিভূতি কেবিন। কলকাতার ঐতিহ্য অনুযায়ী সবাই টিউশনে যেতাম। টিউশনের উদ্দেশ্য পড়া অথবা সময় নষ্ট করা ছিল, তা এই মূহূর্তে ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারি না। আমি বোধকরি টিউশন থেকে কোনোদিন কিছু শিখিনি। তা ওই আড্ডাতেই আমার যা শেখা হয়েছিল। নোট শেয়ার করা থেকে ক্লাসের লেকচারের ভাবার্থ, সব কিছু বিভূতি কেবিনে। আমাদের আশ্পাশে আরও কিছু ভদ্রলোক বসতেন। তাঁরা বোধকরি কলেজে পড়াতেন। ভারি ভাল সহাবস্থান ছিল আমাদের। কেউ অন্য কাউকে বিরক্ত করতাম না। কিন্তু তাঁদেরও কেউ কোনোদিন অনুপস্হিত থাকলে আমাদের চোখে পড়ত।

আড্ডার এক বড় প্রাপ্তি অবশ্যই জেনারেল নলেজ বাড়ানো। রকমারি টপিক, বিশ্লেষন, ভবিষ্যতে কি হতে পারে- কি নেই সেই আড্ডায়। আর পৃথিবীর সব আড্ডাতেই বিভিন্ন চরিত্রের মানুষের সমাবেশ হয়। আমাদেরটাও তার ব্যাতিক্রম ছিল না। জ্যাঠা, মাসী, গুলবাজ, দুঃখবিলাশী – সব হাজির। তাই বিভিন্ন রসের আলোচনা, বিভিন্ন ঢঙে তার পরিবেশনা। কখনো ফিশ ফ্রাই, কখনো বাটার টোস্ট, কখনো মোগলাই, কখনো ফ্রেন্চ টোস্ট, কখনো বা শুধুই চা দিয়ে সেই বাক্যরস কর্নকুহরে প্রবেশ করানো। সেখান থেকে ফিল্টার করে মরমে ঢোকানো। সত্যি বলতে কি বিভূতি কেবিনই আমাকে শিখিয়েছে যে মরমের মেমোরি কার্ডের একটা নির্দিষ্ট লিমিট আছে। সুতরাং ইনফরমেশন ফিল্টার করতে শেখা জীবনে জরুরী। নির্মলদার কাছে আমাদের সবার খবর থাকত। কে কবে আসবে না আসবে- সব। শেষবার বিভূতি কেবিনে সবার দেখা প্রায় সাত আট বছর আগে। এখনও যেন মনে হয় সেই দিনগুলো স্বপ্নের মতো ছিল। ম্যানিব্যাগে সামান্য পয়সা নিয়ে দিনের পর দিন অমন আড্ডা, ওই সঙ্গ, ওই অকারন হাসি চিৎকার অমূল্য।

আর সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আর একটা নাম ভুলতে পারি না। বাদলদা- কলেজ স্ট্রিটের একটা ছোট্ট ঘুপচি বইয়ের দোকানের মালিক। বেশির ভাগ দিনই বিভূতি কেবিন থেকে বেরিয়ে আমরা দু-তিনজন বাদলদার দোকানে যেতাম নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকতে। একটা বই কেনার থাকলে অন্তত ঘন্টাখানেক আড্ডা বাদলদার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। যে বইটা কিনবে, তার মতামতের মূল্য সেদিন সবথেকে কম। বাকিরাই ঠিক করবে কি বই কেনা হবে। একটা বই কেনার জন্য শ’খানেক বই নামানো হবে। তাদের বিশ্লেষন হবে। বিশ্লেষনের ভূমিকা বাদলদার, টীকা টিপ্পনী আসবে বাকি সবার কাছ থেকে। বইয়ের মলাট থেকে কাগজের গুণমান, সব সেই টিপ্পনীর অন্তর্গত। অনেক আলোচনা ধ্বস্তাধ্বস্তি হবার পর একটা বই হয়তো পছন্দ হল সবার। আর বাদলদাও অতক্ষন সময় আমাদের সাথে কাটাত। আর মাঝে সবাইকে চা খাওয়ানো। ধীরে ধীরে বাদলদা আমাদের খুব কাছের বন্ধু হয়ে গেছিল। বাদলদার আর একটা গুন ছিল। খুব ভাল তবলা বাজাত। দিল্লিতে চলে আসার পরও যখনই কোলকাতায় গেছি, বাদলদার কাছে একবার করে ঢুঁ মারতাম। তিন-চার বছর আগে শুনলাম বাদলদা দোকান বিক্রি করে চলে গেছে।

আর একটা জায়গায় আমরা মাঝে মাঝে যেতাম। বিবেকানন্দ রোডের মোড়ে “চাচাস্” বলে একটা ছোটো রেঁস্তোরাতে। মাঝে মধ্যে যেতাম আমরা সবাই মিলে। বাটার টোস্ট আর ফিশ ফ্রাই থেকে জিভের স্বাদ বদলাতে। চাচাস্ এ আমার বিশেষ প্রিয় খাবার ছিল গ্রেভি সমেত প্রন নুডলস আর ফিশ বা প্রনের কোনো সাইড ডিশ। বহুদিন ওখানে আর যাওয়া হয়নি। দেড় তলার উঠে চাচাস্ এর সেই খাবারের কথা মাঝে মাঝেই মনে পড়ে। জানি না আজকের কোলকাতাও একই আছে কিনা। আজকের দিনেও বন্ধুদের আড্ডাতে ছেলে মেয়েরা অমন নির্ভেজাল আনন্দ খুঁজে পায় কি না। হোয়াটস আ্যপ আর ফেসবুকের কল্যানে কতটুকু সময় মানুষের স্বর প্রাধান্য পায় আর কতক্ষন শুধু মোবাইলের টিং টিং আওয়াজ শোনা যায়। ছয় ইন্চি দূরে বসা বন্ধুর সাথেই কথা হয় নাকি বহুদূরে থাকা কোনো ভার্চুয়াল বন্ধুর টানে চোখ মোবাইলেই আটকে থাকে। কলেজের ছেলেমেয়েরা বিভূত কেবিনকে আড্ডাস্হল বানায় কি না ম্যাকডোনাল্ডস বা ক্যাফে কফি ডে বা কোস্টা কফি বা স্টার বাকসের ঝকমকে আবহ তাদের বেশি টানে। আর সব থেকে বড় হল এখনও বন্ধুরা সেই প্রানের টান অনুভব করে কি না একে অন্যের প্রতি। আমিও সময়ের সাথে সাথে অনেক বদলেছি। ভাল লাগা মন্দ লাগার পরিবর্তন হয়েছে অনেক। কিন্তু যে মূহূর্তে সেই দিনগুলো মনে আসে, ইচ্ছে করে কোনোভাবে যদি আবার ফিরে যেতে পারতাম ওই দিনগুলোতে। সেই ঝকঝকে চোখের ছেলেমেয়েগুলোর কারনে অকারনে হাসি আর অনাবিল আড্ডার দিনগুলোতে। নস্টালজিয়া……….আর কোনো সঠিক শব্দ মনে পড়ছে না ওই দিনগুলো সম্পর্কে আমার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য।

সুস্বাগতম

আজ এই নতুন ব্লগটা শুরু করলাম| অনেকদিন যাবৎ ইচ্ছা ছিল বাংলায় ব্লগ লেখার| নানা কারণে হয়ে উঠছিলো না| এই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম অবশ্য কুঁড়েমি| দিন কয়েক ধরেই মনে হচ্ছে আর ফেলে না রেখে ব্লগ তা শুরু করে দিই| কারণ, মন ভালো রাখবার জন্যে রুটিরুজির বাইরে অন্য কিছু করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে| অবশেষে আজ গোধূলিতে সুযোগ হলো ব্লগটা পোস্ট করবার সবার জন্যে|

আপনাদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা| নানা কাজের ফাঁকে সময় পেয়ে এই ব্লগের লেখাগুলো যদি পড়ার সুযোগ পান, তাহলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হবো| আরও আনন্দ পাবো যদি আপনারা এই ব্লগের লেখার মান সম্পর্কে জানিয়ে তা উন্নত করতে সাহায্য করেন|

চেষ্টা করবো নানা ধরণের লেখা এখানে পোস্ট করতে| হয়তো সব থেকে বেশি থাকবে আমার বেড়ানোর অভিজ্ঞতা| লেখা পরে যদি আপনারা সামান্যতম আনন্দ পান, তাহলে সেটা হবে আমার কাছে চরম প্রাপ্তি|

ইচ্ছা থাকলো এই ব্লগের মারফত আপনাদের সাথে পরিচিত হবার ও আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানবার| পরিশেষে সকলকে আমার আগাম ধন্যবাদ|